লক্ষীবালা মাইতি (১০২), জন্ম ১৯২০সালে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের বাগডিহা গ্রামে। ১৩ বছর বয়সে ১৯৩৩ সালে কোলাঘাট থানার পুলশিটা গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগিবেড় গ্রামের এক চাষি বাড়ির নাবালিকা বধুর সাজে সংসারের সুচনা। স্বামী ছিলেন মহাদেব মাইতি।
দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি ১৯৪৭ সালে, লক্ষীবালা তখনই ২৭ বছরের এক দুঃখিনী গৃহিনী। পরাধীন দেশে চার কন্যা সন্তান এবং স্বাধীন দেশে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে মোট ছয় সন্তানের জননী।
স্বামি মারা যান ১৯৭১ সালে। সেই সময়ে চাষবাস আর গায়ে-গতরে খেটে ছেলে মেয়েদের কোনরকমে বড় করে তোলার লড়াইটা ছিল খুবই কঠিন। স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের বুকে আঁকড়ে লক্ষীবালার জীবনে শুরু হয় এক অসম জীবনযুদ্ধ।
২০২২ সালে তিনি ১০২ বয়সী নুয়ে পড়া শরীর, চোখে কম দেখা, কানে কম শুনতে পাওয়া এক বৃদ্ধা।
সংসারজীবনের সেই টানাপোড়েন এই লড়াইটাই যেন হয়ে উঠেছে লক্ষীবালা দেবীর জীবনে অপরিহার্য সূচী।
আজও ৫৯ বছরের ছেলে গৌর মাইতির সাহায্যে তিনি কোলাঘাটের হাটে চট পেতে সব্জি বেচেন। আয় উপার্জনে পালন করেন সংসারে দায়দায়িত্ব।
বর্তমানে ছয় ছেলেমেয়ে, চৌদ্দজন নাতি নাতনি, সাতজন নাত জামাই, সাতজন নাতবউর বটবৃক্ষ হলেন লক্ষীদেবি।
কথায় কথায় স্মৃতিচারণ করেন বৃটিশ সময়ের আবছা হয়ে আসা কতকথা। শোনান দুআনা মজুরি, ষোলোআনায় ষোলটা কোলাঘাটের ইলিশ, তিন টাকায় সোনার নাকছাবির বাস্তব কাহিনী।
মানুষের গড়পড়তা আয়ূর ব্যাতিক্রমী একশ দুই বছরের এই নাগরিক আজো হাঁটাচলা, সংসারের কাজকর্ম থেকে হাটে-বাজারে সব্জি বেচাকেনা করেন সাধ্যমত।
আর তাই দেখে এলাকার অনেকেই বলেন উনি হলেন স্বয়ংসিদ্ধা।
এহেন বৃদ্ধাকেই পঁচাত্তর বছর পূর্তি স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য নির্বাচিত করেছেন কোলাঘাট নতুন বাজারের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সংকেত ক্লাব। ওনাকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে বাদ্যবাজনা সহকারে কোলাঘাট বাজার এলাকায় সুস্বজ্জিত পালকিতে।
হাইস্কুল মোড় থেকে সংকেত ক্লাব পর্যন্ত পায়ে হেঁটে এসে পতাকা তোলেন।