বাঙালির কাছে জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই চন্দননগর, আর আলোর রোশনাই। সেই চন্দননগরে পুজো শুরু শনিবার থেকেই। মায়াবী আলোয় সেজেছে গোটা শহর।ইতিহাস বলে, প্রায় ৩০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল চন্দননগর চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো। তাতে যুক্ত ছিলেন খোদ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র!এক বার খাজনা দিতে না পারায় ব্রিটিশেরা বন্দি করে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে। তখন দুর্গা পুজোর সময়। মায়ের আরাধনা করতে না পারায় বেশ বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।রাজা স্বপ্নাদেশ পান মায়ের। দেবী দুর্গা তাঁকে বলেন, তাঁর আর এক রূপ জগৎজননী জগদ্ধাত্রী মায়ের আরাধনা করতে।
সেই মতো কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই নৌকোয় পাড়ি দেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।রাজা গিয়ে পৌঁছন ফরাসডাঙা অর্থাৎ চন্দননগরে।তখুন নাম ছিল ফরাসডাঙা।চন্দননগরের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ ও কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন বন্ধু। দুই বন্ধু মিলে চালু করেন চাউলপট্টির এই জগদ্ধাত্রী পুজো।চন্দননগরের এই পুজো তখন থেকেই আদি মায়ের নামে পরিচিত। এই পুজোর সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল জোগাড়যন্ত্র করেন শুধু পুরুষেরাই। মহিলারা এতে হাত লাগান না।চাউলপট্টির এই উৎসবের আড়ম্বর হার মানাবে অনেক দুর্গা পুজোকেও। মায়ের কাছে অর্পণ করা হয় সহস্র বস্ত্র। তবে তার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণ। এই বস্ত্র পুজো শেষে বিতরণ করা হয় দুঃস্থ শিশুদের মধ্যে।
মায়ের কাছে অর্পণ করা ফল পাঠিয়ে দেওয়া হয় সদর হাসপাতালগুলিতে। সেই ফল দেওয়া হয় রোগীদের।নবমীর দিন আয়োজিত হয় বিশেষ ধুনো পোড়ার অনুষ্ঠান।দেবীর বিসর্জনের জন্য রয়েছে নিজস্ব ঘাটও। সেখানে একমাত্র এই ঠাকুরই বিসর্জন হয়। বিসর্জনের পরেই কাঠামো তোলা হয় পূর্ণিমার দিনে। প্রতিমার উচ্চতা ১৮ ফুট। চালচ্চিত্র ধরলে সেই উচ্চতা দাঁড়ায় ২৬ ফুটে।দেবীর বিসর্জনকে ঘিরেও রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা, যা লোকমুখে প্রচলিত। প্রতি বছর, বিসর্জনের সময় নিয়ম করে একটি সাপ আসে এই ঘাটে। প্রতিমা বিসর্জনের পরে নিমজ্জিত প্রতিমার চারপাশে ঘুরে সেটি আবার চলে যায়।এই হলো আদি মা।