হরিশ্চন্দ্রপুর, ৬ অগষ্ট : জটিল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত ৭ বছরের শিশু । অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা । নেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড । সরকারের কাছে সাহায্যের কাতর আর্জি জানিয়েছে পরিবার । ঘটনাটি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ।
জানা যায়, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাসায়ী মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাঙ্গনদীয়া গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ মুসাব্বি । বয়স ৭ । বাবা দিনমজুর হেদাতুল ইসলাম । টাকার অভাবে থমকে রয়েছে ছেলের চিকিৎসা । এরফলে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মহম্মদ মুসাব্বি । প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট থাকলেও মিলছে না ভাতা । হয়নি স্বাস্থ্য সাথী কার্ডও । সরকারি সাহায্যের আশায় চেয়ে আছে পরিবার ।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা । কংগ্রেস কটাক্ষ করছে তৃণমূলকে । প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ।
শিশুটির মা আজমেরী বিবি জানান, তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে । স্বামী দিনমজুর । মহম্মদ মুসাব্বি ছোট ছেলে । শিশুটি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে জন্ম হলেও জন্মের একবছর পর ডায়েরিয়া হয়ে যায় । এরপর থেকে শরীরে অসুখ বাসা বাঁধতে থাকে । শরীর ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যায় । হাত পা সরু হয়ে যায় । মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় বড়ো হতে থাকে । সব সময় বিছানায় শয্যাসায়ী হয়ে থাকে । একা চলাফেরা করতে পারে না । মালদা ও কলকাতায় চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলেও টাকার অভাবে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করাতে পারেনি । ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে যথেষ্ট টাকার প্রয়োজন । দিনমজুর স্বামীর পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না । তাই সরকারি সাহায্যের আশায় চেয়ে রয়েছি ।
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, “ঘটনাটি জানতে পারলাম । খুব দুঃখজনক । আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা তড়িঘড়ি ব্যবস্থা করে দেব । শিশুটির দ্রুত আরোগ্য এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করছি ।”
কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি আব্দুস শোভান তীব্র কটাক্ষের সুর চড়িয়ে বলেন,” তৃণমূলের আমলে যারা কাটমানি দিতে পারবে তাদেরই শুধু কাজ হবে । এই পরিবারটি গরিব. দিতে পারেনি । তাই কাজ হয়নি । মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে । এমনকি বড় বড় নেতা মন্ত্রীদেরও এই কার্ড আছে । কিন্তু গরিব মানুষের নেই। এটাই এই সরকারের বাস্তব চিত্র । মানুষ আশা করি সবটা বুঝছে । আমরা ঐ পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব ।”
পাল্টা তৃণমূল নেতা সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, “সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা বিষয়টি শুনতে পেলাম । দুয়ারে সরকার প্রকল্প তে যারা আবেদন করেছে সকলে পেয়েছে । ওই পরিবারটি যদি না পেয়ে থাকে ব্যাপারটি দেখা হবে । স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর আমলে সকল রাজ্যবাসী এই সুবিধা পাচ্ছে ।” কংগ্রেসের প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, “মিথ্যা সমালোচনা করাই এদের কাজ । কংগ্রেস নেতারা কার্ড না পেয়ে থাকলে আমরা কার্ড করে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করিয়ে দেব ।”
তবে এই ধরনের ঘটনা হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় বারবার দেখা যাচ্ছে । গরিব পরিবারের মানুষেরা জটিল রোগে আক্রান্ত । কিন্তু তাদের থাকছেনা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড । পয়সার অভাবে করাতে পারছে না চিকিৎসা । যা অত্যন্ত দুঃখজনক । প্রশাসনের উচিত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা যাতে সমাজের সব স্তরের মানুষ পায় তার জন্য তৎপর হওয়া । এই অসহায় পরিবারের পাশে দ্রুত দাঁড়ানো ।