বাংলার ১১৭৬ সন৷ ঘোর মহামারীর প্রকোপ বঙ্গদেশ জুড়ে৷ না খেতে পেয়ে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে মানুষ৷ রাস্তাঘাটে পড়ে থাকছে মৃতদেহ৷ ঘিরে ধরছে কুকুর-শকুনের দল৷ বর্তমান প্রজন্ম হয়তো সেসব দৃশ্য কল্পনা করতে পারবে না৷ কিন্তু সোমালিয়ায় বুভুক্ষু মানুষের মৃতদেহ শকুনে ছিঁড়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখে যখন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে সেই প্রজন্ম, তখন এই বাংলায় ঘটে যাওয়া একই ঘটনা তাদের মনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা সহজে বোঝা যায়৷
ইংরেজি ১৭৭০ সালের দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মালদা জেলাও৷ এই জেলাতেও না খেতে পেয়ে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বংশের সঙ্গে দুর্গত প্রজাদের রক্ষা করতে কালীপুজোর আয়োজন করেছিলেন রতুয়া রুকুন্দিপুরের জমিদার বেণীমাধব ঘোষ৷ সেই শুরু! এখনও নিরবিচ্ছিন্নভাবে হয়ে আসছে পুজো৷ এবার এই পুজো ২৫১ বছরে পা দিচ্ছে৷ তবে করোনার প্রভাব পড়েছে এই পুজোতেও৷ করোনা নিধনে এবার এই পুজোয় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশেষ যজ্ঞ৷
বেনীমাধব ঘোষের চতুর্থ পুরুষের বংশধর বিরোজানাথ নাথ ঘোষ জানান বাংলার ১১৭৬ সোন অর্থাৎ ইংরেজি ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সারা বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছিল মহামারী সেই মহামারী থেকে বাদ যায়নি আমাদের ভারতবর্ষের মালদা জেলাও। আমার প্রপীতা বেনীমাধব ঘোষ নিজের বংশধর ও প্রজাকুলের রক্ষার্থের জন্য দক্ষিণা কালী পুজো আরম্ভ করেছিলেন।
https://www.facebook.com/230205334351193/videos/3522555827798037
সেই সময় থেকেই এই পুজো হয়ে আসছে।তবে আমাদের ঘোষ বংশে এই পুজো সীমাবদ্ধ থাকেনি।রতুয়া এলাকার ভক্তরা এখানে আসেন পুজো দিতে।জাগ্রত পুজো বলে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে এসে ভিড় জমান। এমনকি আশেপাশের মুসলিম ভাইয়েরা এই কালী মায়ের পুজোতে অংশগ্রহণ করেন। কালীপুজোর রাতে প্রায় ৫০০ টি ছাগ ও একটি মেষ বলি হয়। মন্দির চত্বরে বসে মেলা।
সেই রাতে চলে নরনারায়ন সেবা। তবে এ বছর করোণা মহামারীতে সমস্ত দেশ আক্রান্ত সেদিকে লক্ষ্য রেখে মন্দির চত্বরে কোন মেলার আয়োজন করা হবে না। এবং মন্দিরের ভেতরে কোন লোকজন প্রবেশ না করে সে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
কেবলমাত্র মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে এই পরিবারের আমি এবং পুরোহিত ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এবছর এই পুজোতে একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে করোনা মহামারীকে ঠেকাতে যজ্ঞের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই যজ্ঞে যারা যারা আহুতি দিতে ইচ্ছুক সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেই যজ্ঞে আহুতি দিতে পারেন।