বৃষ্টির জলে প্লাবিত কৃষিজমি, জল নিকাশের অভাবে ডুবছে ফসল, অবরোধ
নিকাশি খাল দিয়ে জল সরে না, প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকার চাষবাস। প্রায় ১৫০০ মিটার লম্বা নিকাশি খাল। খালের কোথাও কচুরিপানা জমে রয়েছে, কোথাও মাছ ধরার বাঁধ করা হয়েছে। জমা জল বেরোনোর রাস্তা প্রায় বন্ধ। ফলে ক’দিনের টানা বৃষ্টির জেরে শত শত বিঘা কৃষি জমি কোমর সমান জলের তলায়।
অবিলম্বে জল নিস্কাশনের দাবী নিয়ে সরব হলেন এলাকার কৃষকরা। ক্ষুদ্ধ হয়ে শনিবার পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার চারটি গ্রামের কৃষকরা।
উল্লেখ্য, খালটি মালদহের চাঁচল ১ নং ব্লক এলাকার মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালচা থেকে খানপুরের খালের সঙ্গে মিশেছে। খালটি এলাকার মরা মহানন্দায় সংযোগ ছিল পূর্বে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
এরমধ্যে মালচা গ্রামের কাছে ওই খালের একটি কংক্রিটের সেতুও তৈরী হয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সড়ক নির্মান কালীন মাটি চাপা পড়ে খাল বন্ধ হয়েছে খানপুরের ক্যানেল টিতে।ফলে নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃষ্টির জেরে বিস্তীর্ণ এলাকায় জমা জল সরাতে ওই খালের মুখে ক্যানেল ও করা হয়েছিল তবে তা বর্তমানে মাটি ভরে বন্ধ হয়েছে। সেটি খানপুরে রয়েছে।
১৫০০ ভিটার লম্বা খাল জুড়ে বড় বড় কচুরি পানার জঙ্গল ভরে গেছে। তা ছাড়া, বড় সমস্যা খালটি বহু বছর ধরে ভাল ভাবে সংস্কার না হওয়ায় গভীরতা কমে গেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই খাল উপচে পড়ার দশা হয়।
এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টির জমা জল সরার লক্ষণ নেই। ১৬৩ নং মালচা ও ৪৮ নং ইসলামপুরের বমপাল মাঠের কৃষিজমিতে কোথাও কোমর সমান, কোথাও বুক সমান জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধানের চারা পচে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। কৃষি জমির আমন ধান সেগুলিরও একই অবস্থা। প্লাবিত হয়েছে নানা সব্জি চাষেও। এলাকাগুলি মূলত কৃষিপ্রধান। ফসল নষ্ট হলে সারা বছর কী ভাবে চলবে, তা ভেবে মাথায় হাত চাষিদের।
চাঁচল ১ নং ব্লক কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে মালচা ইসলামপুর কোবাইয়া মৌজার বমপাল মাঠে প্রায় ৪০০ বিঘে জমি রয়েছে।
মূলত মালচা,গালিমপুর,মথুরাপুর,শ্রীপতিপুর,কৃষ্ণপুর,পরশুরামপুর,কোবাইয়া,গোপালপুরের প্রায় একাধিক গ্রামের এই মাঠটিতে বেশিরভাগটাই ধান চাষ হয়ে থাকে বলে কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর। তবে সব্জি চাষও হয় বলে জানান কৃষকরা।
সমস্যায় কৃষকরা ( মালদা )
Gepostet von ACN Life News am Samstag, 26. September 2020
এলাকার চাষি বাবুল হক,আব্দুল রশিদ ও নাজমুল হক রা জানালেন, তাঁদের ১০-১৫ বিঘা করে কৃষিজমি রয়েছে। ওই জমির চাষের ফসল বিক্রির টাকাটুকুই সারা বছরের সম্বল। এ বার ভাল বীজতলা করতে পারলেও জমা জলে তা প্রায় শেষের মূখে। টানা লকডাউনের ফলে ফসলই ঘাটতি মেটাবে বলে দিনগুনছিলেন তারা।
তবে জমা জলে ফসল কি আদৌ হবে সেই চিন্তায় এখন ঘুম উড়েছে এলাকার কৃষকদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ২০১৬ সালে এই জল নিস্কাশনের সমস্যা নিয়ে কয়েকটি গ্রামের তরফে প্রশাসনের কাছে একাধিক বার দরবার করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। শুধুই মিলেছে আশ্বাস বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে এদিন পথ অবরোধ কর্মসূচী বেছে নিই এবং সমস্যার সুরাহা না হলে পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। গালিমপুর-চাঁচল গ্রামীন সড়কের মালচা স্ট্যান্ডে এদিন টানা ১ ঘন্টা পথ অবরোধ করেন কৃষকরা। বন্ধ হয়ে যান চলাচল। পরে স্থানীয় প্রশাসনের ফোন পেয়ে আশ্বস্ত হয়ে অবরোধ তুলে নেন কৃষকরা।
মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পিঙ্কি খাতুন স্বামী সাহিদ আক্তার অবশ্য বলেন, ওই এলাকার খালটি এর আগে সংস্কার করা হয়েছে এবং পরিস্কার করা হয়েছে। তবে জল নিকাশির শেষ প্ল্যান খানপুরের খালটি বন্ধ হয়েছে। ওখানে রাস্তা সংস্কারের সময় মাটি ভরে খালের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
সেটি পঞ্চায়েতের তরফে কাজ করা সাধ্য নয়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
মালদা জেলাপরিষদের কৃষি সেচ ও সমবায় দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল হোসেন আশ্বাস দিয়ে বলেন, ওই এলাকাটি কৃষি প্রধান এবং আনাজ ভান্ডার নামে পরিচিতি রয়েছে। কৃষকদের সমস্যাটা শুনেছি। জল নিকাশির ব্যবস্হা নিয়ে স্থানীয় বিডিও- এর সাথে আলোচনা করবেন। এবং ওই এলাকায় জল নিস্কাশনের জন্য হিউম পাইপ ব্যবহার করা যায় কিনা তা প্রশাসনের তরফে খতিয়ে দেখা হবে। জমা জলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে কর্মাধ্যক্ষের তরফে।
দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সূরাহ আদৌ কি হবে। এই আশায় রইলেন ওই এলাকার কৃষকরা।