রাজীব দত্ত, নদীয়া-২৮ মে :- কথায় আছে,শেখার কোন বয়স হয় না।সেটা আরও একবার প্রমাণিত হল। বার বার চেষ্টা করে ডাক্তারি পাশ করলেন ৫২ বছর বয়সের প্রদীপ হালদার । তিনি একজন অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে ।পেশায় নীজে দিনমজুর প্রদীপ হালদার । তিনি মাধ্যমিকের পর আর পড়ার সুযোগ করে উঠতে পারেননি তাই পড়াটাও হয়নি । তাই সাংসারিক চাপের কারণে পেট বাঁচানোর চিন্তা করে যেতে হয়েছিল তাকে। ছোট বেলা থেকে ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে ছিল । এই জন্য এলাকার লোকজন উপহাস করে বলত ঐ দেখ এমবিবিএস ডাক্তার যাচ্ছে । সমস্ত টিটকারী শুনে কোন উত্তর না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখত জেদ আর অধ্যাবসায় ।
সমস্ত স্বপ্নকে পেছনে ফেলে সেই সময় তার অতীতটাকে ভুলে যেতে হয়েছিল।এবং বাধ্য হয়েছিলেন বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে ।তারপরে অবশ্য তিনি বিয়ে করেন এবং পরবর্তী সময় তার দুটি সন্তান হয। এক ছেলে এবার মাধ্যমিক দিয়েছে ।দু’জনকেই কষ্টের মধ্য দিয়ে মানুষ করতে হচ্ছে দিনমজুরি করে।তবে সেই সমস্ত কিছুকেই পেছনে ফেলে আবার ফের নতুন করে স্বপ্নটাকে খুঁজে বের করে সেই স্বপ্নপূরণ করার লক্ষ্যর নাম হয়তো প্রদীপ হালদার। তিনি মনের গোপন কুঠুরিতে আবারও পড়াশোনা করার এবং ডাক্তারি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বহু লড়াই করে ২০০০ সালে বিজ্ঞান শিক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন কোন প্রাইভেট টিউশনি ছাড়ায় ।তারপর জয়েন্ট এন্ট্রান্সে বসার জন্য কিছু পুরাতন বই কেনা শুরু করেন।এবং সেই বই পড়া শুরু করেন। ভোর থেকে দিনমজুর কাজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সন্ধ্যেবেলায় বাড়ি ফিরে স্নান ।এরপর ছেলেদের সাথে পড়তে বসেন । বাড়ির স্ত্রীও এমন কান্ড দেখে বিরক্ত হয়ে বলেন হবেনা ,ঐ সব নাকরে সংসারের কাজে মন দাও যতসব পাগলের প্রলাপ । তবুও বইয়েই মুঝে থাকতেন প্রদীপ বাবু।পাড়ার আত্মীয়দের কাছে এমনকি নিজের বাড়িতে তাকে পাগলামি নিয়ে কথা শুনতে হত বারবার ।তবে কে কার কথায় কান দেয় মানুষের কথা তো মানুষই বলবে ।লক্ষ্য ছিল স্বপ্নকে সফল করার সেই লক্ষ্যে অবিচল থেখেছে ,আর মনেমনে জেদের মাত্রা বাড়িয়েছেন ‘ ৷তারপর সব ইতিহাস ,যারা তাকে একসময় পাগল বলেছেন তারা এখন তাকে বাহবা দিচ্ছেন ৷এমন কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী সম্পূর্ণ মানুষেরাও’। বাড়ি নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানা এলাকার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া প্রতাপপুর গ্রামে । ছোট্ট ভগ্ন দশা ঘর ,পেশায় দিনমজুর, কোনো দিন খাবার জোটে ,কোনো দিন জোটেনা । যেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত মাত্র একশো মিটার দূরত্বে ।সেই সীমান্তের 52 বছরের বয়সের আজ এপার বাংলা ওপার বাংলা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে প্রদীপ বাবুর নাম । তিনি এমবিবিএস পাশ করার চেষ্টা করেছিলেন সুযোগ হয়নি তাতে কি আছে? হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ তো আছে ।
হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে সুযোগ সেখান থেকেই তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে । তিনি একসময় ভেবেছিলেন হয়তো তার ডাক্তারী পড়া আর হবে না কিন্তু কথায় আছে লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে তাহলে সব স্বপ্নই পূরণ করা সম্ভব ।প্রদীপ বাবু তিনি লক্ষ্য থেকে সরে না গিয়ে 2021 সালে নিট পরীক্ষায় বসেন এবং সকলকে চমকে দিয়ে পাশ করেন তার নেট রাঙ্কিং 346,234 ।হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কলেজের অধ্যক্ষ বলেন এত বেশি বয়সে কাউকে মেডিকেলে পাস করতে দেখিনি কিন্তু প্রদীপ হালদার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে যেভাবে পাশ করেছেন তাতে অধ্যক্ষ যথেষ্ট খুশি ।আর প্রদীপ হালদার এর কথায় এমবিবিএস হলো না তো কি হয়েছে? হোমিওপ্যাথি ডাক্তার তো বলতে পারব ।
তার স্বপ্ন এভাবেই পূরণ হোক সাধুবাদ জানিয়েছেন একাধিক সিনিয়র সিটিজেন থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী সম্পন্ন মানুষেরা ।এখন দেখার বিষয় আগামী দিনের পথ চলা কতটা মশ্রীণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন । আমরাও চাই তিনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক হোন । তার ক্ষুদ্র ঘরে জ্বলে উঠুক আলোর রোশনাই । পরিবারের কষ্ট দূর হোক । তার এহেন প্রচেষ্টাকে আমরা কুর্নিশ জানাই ।