হিন্দু ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকার করতে এগিয়ে এলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা। গত ১০দিন ধরে পূর্ব বর্ধমান জেলার মাধবডিহি থানার অন্তর্গত কাইতি গ্রামের বাসিন্দা কাজল দাস তার স্বামী সঞ্জয় দাস কে ভর্তি করেন বর্ধমান হাসপাতালে। অত্যন্ত দরিদ্র থাকার কারণে নিজের স্বামীর চিকিৎসার জন্য ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত হাসপাতাল গেটের অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডের সদস্যদের কাছ থেকে ওষুধ কেনার জন্য আর্থিক সাহায্য চান। সেই আবেদনে সারা দিয়ে নিজেদের সাধ্যমতো চাঁদা তুলে ওই ব্যক্তিকে ওষুধ পত্র এবং রক্তের যোগান দেয়া হয়েছিল।শুক্রবার ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ায়। হাসপাতাল গেটের তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড এর চালকরা নিজেদের সাধ্যমত চাঁদা তুলে মৃত ব্যক্তি সঞ্জয় দাসের সৎকার্যের ব্যবস্থা করলেন।
এই বিষয়ে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী কাজল দাস জানান,
আমার স্বামীর পেটে ঘা হওয়ার কারণে, ভর্তি করেছিলাম বর্ধমান হাসপাতালে এবং কাল রাত তিনটে নাগাদ মারা যায়। এই স্ট্যান্ডের মুসলিম ভাইয়েরা আমার অনেক সাহায্য করেছে প্রথম দিন থেকেই। আজকে মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থাও করা হলো এই মুসলিম ভাইদের সহযোগিতায়। এই ভাইয়েরা আমাকে যেরকম ভাবে সাহায্য করেছে। অন্য কোন বাঙালি ভাই করবে না। আমার পরিবারের বাবা নেই, ভাই নেই, খুবই অসহায় অবস্থায় ছিলাম। সাহায্যের জন্য বাঙালি ভাইদের কাছে গেলে তারা আমাকে সাহায্য না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি হাসপাতাল গেট এর স্ট্যান্ডে মুসলিম ভাইদের কাছে আসার পর তারা আমার স্বামীর মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা এবং আমাকে হাতে কিছু সাহায্য প্রদান করলেন বাড়ি যাওয়ার জন্য।
এই বিষয়ে হাসপাতাল গেটের স্ট্যান্ড এর সদস্য শেখ প্রিন্টার জানান,
গত ১০ দিন আগে এই ভদ্রমহিলা ওনার স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে পরিবারের আর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি উনি একাই এসেছিলেন। ভর্তি হওয়ার পর এই ভদ্রমহিলা আমাদের কাছে যতবার এসেছে ওষুধ এবং রক্তের সাহায্যের জন্য আমরা যতটা সম্ভব সাধ্যমত করেছি। আজ রাত তিনটে নাগাদ উনার স্বামী মারা যান। সেইমতো আমরা স্ট্যান্ডের সমস্ত চালকদের কাছ থেকে সাধ্যমত চাঁদা তুলে উনার স্বামীকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সৎকার্য সম্পন্ন হয়। এই ভদ্র মহিলাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য হাতে কিছু আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হবে। এখানে আমরা অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলেরা থাকি। আমরা হিন্দু মুসলিম না দেখেই যখন যার বিপদ হয় তাকে সাহায্য করার জন্য আমরা ঝাপিয়ে পরি। অনেকেই বলেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা সব সময় খারাপ কাজে লিপ্ত থাকেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ভালো কাজও করে থাকেন।