স্রোতের বিপরীতে হেঁটেই সাফল্য লাভ, জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষক । আসি যাই মাইনে পাই গোছের শিক্ষকতা নয়। ছোট বয়সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ ও প্রকৃতি প্রেম জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষণ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগেই মিলল সাফল্য। জাতীয় শিক্ষক হিসাবে সম্মান পেতে চলেছেন বাঁকুড়ার জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বুদ্ধদেব দত্ত। বাঁকুড়ার জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেব দত্ত। ছোট বেলায় পড়াশোনা গ্রামের জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ১৯৯৯ সালে বিষ্ণুপুরের দেউলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে ২০১২ সালে সহ শিক্ষক হিসাবে গ্রামের জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। নিজে যে স্কুলে শৈশব কেটেছে সেই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে ফিরে এসে স্কুলকেই ধ্যানজ্ঞান করে তোলেন বুদ্ধদেব বাবু।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্যদের সহযোগীতায় স্কুলের পরিবেশই আমূল বদলে ফেলেন বুদ্ধদেব বাবু। স্কুলের ক্লাসরুমের দেওয়াল গুলিকে বিভিন্ন পাঠ্য বিষয়ের ছবি ও পাঠ্য বিষয় দিয়ে রঙিন ও শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলেন। স্কুলের সীমানা পাঁচিলেও ফুটিয়ে তোলেন নানা মূল্যবোধ ও প্রকৃতি প্রেমের দুর্দান্ত সব রঙিন ছবি ও বার্তা। স্কুলের সমস্ত পাঠ্য বই কে বার কোডে রুপান্তরিত করে স্কুলের দেওয়াল ও গেটে সেই বারকোড এঁকে দেন যাতে যে কোনো অভিভাবক নিজের ফোনে বারকোড স্ক্যান করে অনায়াসেই পেয়ে যেতে পারেন যাবতীয় পাঠ্য সূচী। করোনাকালে যখন সমস্ত মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছিলেন সেই সময় বুদ্ধদেব বাবু অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি স্কুলের প্রতিটি পড়ুয়ার বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বুঝিয়ে দিয়েছেন বই এর পড়া, নিয়ম মেনে নিয়েছেন পড়ুয়ায়দের মূল্যায়ন। তবে তাঁর শিক্ষা শুধু পড়ার বইয়েই সীমাবদ্ধ থেকেছে তাই নয় তাঁর চেষ্টায় স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে তৈরী হয়েছে পড়ার বইয়ের বাইরে গল্প, বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বদের জীবনী সহ বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার ঝোঁক। স্কুলের পড়ুয়াদের লেখাপড়া শুধুমাত্র ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ না রেখে তাঁদের নিয়ে কখনো বুদ্ধদেব বাবু গেছেন স্থানীয় জঙ্গলে আবার কখনো স্থানীয় প্রাচীন মন্দিরে।
হাতে কলমে তাদের চিনিয়ে দিয়েছেন গাছ, গাছালি, পশু পাখি। বুঝিয়ে দিয়েছেন ইতিহাস, স্থাপত্য, ভাস্কর্যর হাল হকিকৎ । তাঁর এই শিক্ষণ পদ্ধতি মন কাড়ে নির্বাচকদের। ২০২০ সালে রাজ্য সরকারের শিক্ষারত্ন পুরস্কার পান বুদ্ধদেব দত্ত। এবার জাতীয় শিক্ষক হিসাবে পুরস্কার প্রাপক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে বুদ্ধদেব দত্তর নাম। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে পুরস্কার নেবেন ওই শিক্ষক। বুদ্ধদেব দত্তর এই পুরস্কার প্রাপ্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই খুশির জোয়ারে ভাসছেন স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল। খুশি শিক্ষকের পরিবারও। বুদ্ধদেব বাবুর দাবী এই পুরস্কার প্রাপ্তি তাঁর দায়িত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিল।