জন্ম থেকেই মাথাটা স্বাভাবিকের চেয়ে বড়ই ছিল মেয়েটির। এক বছর বয়সে দেখা গেল মাথা ফুলে বিশাল আকার নিয়েছে। অসহ্য মাথা যন্ত্রণায় মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল শিশুটি। তার মস্তিষ্কের আকার দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ডাক্তাররাও। পরে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় আজব কাণ্ড।আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব নিউরোলজি জার্নালে (American Academy of Neurology’s journal) এই খবর ছাপা হয়েছে। হুয়াসান হাসপাতালের ডাক্তার জংজে লি শিশুটির চিকিত্সা করেছেন। তিনিই সার্জারি করে মগজ থেকে দুটি যমজ ভ্রূণ বের করে মেয়েটির প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
পৃথিবীতে মাত্র ২০০ জনের মধ্যে দেখা গেছে এমন। চিকিত্সার পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলে ফিটাস ইন ফিটু ( fetus in fetu)। অর্থাত্ শিশুর পেটে ভ্রূণের উপস্থিতি। এই বিরল রোগ পাঁচ লক্ষ শিশুর মধ্যে এক জনের হয়। মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই একটি ভ্রূণ অন্যটির মধ্যে ঢুকে পড়ে। সাধারণত অপরিণত ভ্রূণ তুলনায় পরিণত হতে থাকা ভ্রূণের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। সেটি পরিণত ভ্রূণের শরীরের যে কোনও জায়গায় ঢুকে বাড়তে থাকে। সেটা মস্তিষ্ক হতে পারে অথবা পেট, হাড় বা শরীরের কোনও গ্রন্থিও হতে পারে।ফিটাস ইন ফিটু (fetus in fetu ) কী?
মায়ের গর্ভে যমজ ভ্রূণ তৈরি হলে এমন ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে জোহান ফ্রেডরিক মেকেল প্রথম ‘ফিটাস ইন ফিটু’ -র কথা জানিয়েছিলেন। ১৮০৭ সালে জর্জ উইলিয়াম ইয়াং প্রথম এমন একজন রোগীর বিস্তারিত কেস রিপোর্ট সামনে আনেন।
যমজ বাচ্চা মূলত হয় দুই ধরনের: মনোজাইগোটিক বা আইডেন্টিক্যাল যমজ, ও ডাইজাইগোটিক যমজ। কখনও যদি দুটি শুক্রাণু ও দুটি ডিম্বাণুর মিলনে দুটি জাইগোট তৈরি হয়, তবে ওই দুটি জাইগোটের বিভাজনে যে যমজ সন্তানের জন্ম হয় তারা হল ডাইজাইগোটিক যমজ।অপরদিকে, মনোজাইগোটিক যমজে একটিমাত্র জাইগোটই তৈরি হয়। কিন্তু জাইগোটের বিভাজনের শুরুর দিকে জাইগোট বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রূণ তৈরি করে। ফলে এভাবে যে যমজ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তারা হল মনোজাইগোটিক যমজ। ৭০ শতাংশ মনোজাইগোটিক যমজ একটিমাত্র প্লাসেন্টা বা অমরার (Placenta) মাধ্যমে মায়ের দেহের সাথে যুক্ত থেকে খাদ্য, পুষ্টি সংগ্রহ করে। এমন যমজদের বলা হয় মনোকোরিওনিক (একই অমরাবিশিষ্ট) মনোজাইগোটিক যমজ।